Saturday, February 26, 2011

অধরা ভালোবাসার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন অণুগল্প অথবা একটি গাঁজাখুরি গল্প

একে একে পাঁচজন উঠে যাই শহীদ ভাইয়ের বাসার ছাদে। এই ছাদটির প্রতি এক ধরণের দুর্বলতা আমাদের সবার মাঝেই যে আছে সেটা বেশ বুঝা যায়। আকাশে জোছনার বৃষ্টি ছড়িয়ে তীব্র চাঁদের স্নিগ্ধ খোমার উপরে ধোঁয়াটে কুয়াশা এক ধরণের রহস্যময় বিষণ্ণতা তৈরি করেছে। একে একে পাঁচজন বসে যাই জায়গা মত। নেশার আহবানে সাড়া দেয়া পাঁচ জোড়া নেশাতুর চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে জেগে থাকে বিষণ্ণ কুয়াশার নিচে। ধোঁয়াটে কুয়াশার নিচে খুব আস্তে আস্তে ক্রমে ছড়িয়ে পরে আমাদের ঝাঁঝালো গাঁজার ধোঁয়া। তারপরে একে একে সবার কথায় ছড়িয়ে পরে আপন কল্পনার বিমূর্ত ছবিগুলো। সোহেল ছেলেটা শহীদ ভাইকে ভালো মতই চেপে ধরেছে আজকে। গল্পকার শহীদ ভাইয়ের কাছ থেকে গল্প লিখা আজ যে করেই শিখে নিতে হবে আমাদের।
রাত ক্রমশ যৌবনবতী হতে থাকে । সেই সাথে রূপালি হতে থাকে জোছনার বিষণ্ণতা। শহীদ ভাইয়ের দৃষ্টি ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকে বাড়ির পাশের ডোবা অথবা তার পাশের আঁধার ঘেরা রহস্যময় জংলা ঝোপের দিকে। ” আজকে গল্প বলার কন্টেস্ট চলবে। ভালোবাসার গল্প।” আলতো করেই কথাটা ছুড়ে দেন শহীদ ভাই। এতটা অবলীলায় বের হয়ে কথাটা ছড়িয়ে পরে, যেন বিকেলে আপন বিদায় বার্তা ঘোষণা করে সন্ধ্যার বাতাসে তরল হয়ে ছড়িয়ে পড়া শেষ আলোকচ্ছটা। শহীদ ভাইয়ের কথার সাথে সাথে ছড়ায় গাঁজার ধোঁয়া। আর সিয়ামের রিনরিনে গলার উপস্থিতি উপলব্ধ হয়। আর নেশাতুর মনগুলো ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ছোট ছাদের গণ্ডি পেরিয়ে সিয়ামের গল্পের ভিতরে।
” গল্প শুরু হবে একজন মানবকে দিয়ে।তার মাঝে স্বপ্ন থাকবে কষ্ট থাকবে ভালোবাসা থাকবে। ঘোর বৃষ্টিতে মুক্তির অবগাহনে দুঃখকে নিঃশেষ করে দেয়ার করুণ প্রচেষ্টা থাকবে। আবার সকল কষ্টকে পেছনে ফেলে সে হবে প্রচণ্ড বাস্তববাদী। কাঠিল্য আর কোমলতার অদ্ভুত মিশ্রন থাকবে তার চরিত্রের মাঝে। আর, হ্যা আর কোনও চরিত্র থাকবে না গল্পের শুরুতে অথবা মাঝে। তারপরে একদিন তার রাত কাটবে নির্ঘুম। নির্ঘুম রাত্রি যাপিত রক্তবর্ণ আঁখিতে তার সেদিন থাকবে অশ্রুশূন্য বোবা কষ্ট। তার নোনা চেতনা দিয়ে তার কষ্টকে অনুভব করবে ক্লান্ত প্রভাতে। এমন সময় তার দৃষ্টি যাবে টেবিলের উপর রাকা ছোট কোন উপহার অথবা একটি ছোট পত্রের মাঝে। ” তোমার তীব্র কষ্টের উপর আমার ভালোবাসা হয়তো অনেক ক্ষুদ্র অসংখ্য কাঁটার উপরে বসে থাকা ছোট্ট গোলাপটির মত, তবুও যেনো তোমার অসীম কষ্টকে আমার ছোট্ট গোলাপ দিয়ে ঢেকে দিতে চেয়ে আমি তোমাকে শুধুই আছি অবিরত তোমার পাশে ….. “। ঘোর লাগা চোখে উপহারের কাঁটাগুলোর উপর বসে থাকা গোলাপের সৌরভে কোন এক অজানা মানবীর অধরা ভালোবাসা আঘাতের ক্ষতে প্রলেপ লাগাবে অবিরত।”
সিয়ামের রিনরিনে গলা নেশার বাতাসে মিলিয়ে যাবার আগেই লাবিবের গলা শোনা যায়। “ধ্যেৎ ব্যাটা এখনো পুতুপুতু প্রেম থেকে বের হতে পারলি না।”
“লাবিব তোমার গল্প শুরু করো।” শহীদ ভাইয়ের অন্যমনস্ক অথচ তীক্ষ্ম কন্ঠ শোনা যায়।
কিছুটা থেমে গিয়ে সময় নিয়ে শুরু করে লাবিব।
“হাসপাতালের ওয়েটিং লবিতে হাজার হাজার মানুষের মাঝেও একজনকে আলাদা করে বুঝা যায়। মানুষটির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মনটা অবশ্য ঢেকে যায় তার তীব্র দৃঢ়তার বলয়ে। ডাক্তারের সাথে কথা বলার মত মানসিক শক্তি ধরেছে রেখেছে কী ভাবে তা হয়তো সে নিজেও জানে না।
-মি শামীম, উই আর রিয়েলি সরি টু সে ইট টু ইউ। আপনার ওয়াইফ খুবই ক্রিটিক্যাল পজিশনে আছে। আপনা কোন নিশ্চয়তা দিতে পারি না, শুধু চেষ্টা করে যেতে পারি। উনার গর্ভের বাচ্চার পজিশন আরো ক্রিটিক্যাল। এই মূহুর্তে ডেলিভারি না করলে হ্য়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। নাউ ইটস ইউর ডিসিশান টু মেক।
- ডিসিশন মেক করার কী আছে? বাচ্চাকে বাঁচাতে ডেলিভারি করুন।
- কিন্তু ……. ডাক্তারের গলা একটু কেঁপে যায় যেনো।
- কিন্তু কি ?
- কিন্তু আমাদের রিপোর্ট বলছে বাচ্চার মার যথেষ্ট ফিটনেস নেই এনেস্থেশিয়া করার মত। এমন অবস্থায় অপারেশন করলে হয়তো জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হবে না।
মূহুর্তের মাঝে পৃথিবী দুলে উঠে শামীম সাহেবের। ডাক্তারের কথার পরোক্ষ মানে তিনি বুঝতে পারেন যেন। অপারেশনের কনসেন্ট দেয়া মানে তার ভালোবাসার পরীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা। তার চোখে ভেসে উঠে তাদের স্বল্প দাম্পত্য জীবনের সুখময় মূহুর্তগুলো। তাদের গল্পমুখর রাত রোমান্টিক রূপালি সন্ধ্যা কিংবা ঝগড়ার ধূসর সময় আবার ঝগড়ার পরে মিলনের মধুর সুধা পান। মনে পরে তাদের খুনসুটি মনে পরে বিয়ের আগে কে কত বেশি ভালোবাসে তা নিয়ে নিরর্থক তর্ক। আবার নবজাতকের নামকরণ নিয়ে তাদের মাঝেকার আলোচনা কিংবা নবজাতকের সাথে কল্পনায় তার পরীর অবিরাম কথোপকথন। তাদের সুখস্বপ্ন।
আবার অপত্য স্নেহ তাকে জড়িয়ে ধরে যেনো। সেই সন্তান তার সমস্ত সত্তায় ধারণ করেছে তার প্রায় হারিয়ে যাওয়া পরীকে। এমন কিছু সময় আসে যখন যে কোন সিদ্ধান্তই ভুল মনে হয়। এমনি সিদ্ধান্তই হয়তো সেদিন তাকে নিতে হয়।
তারপরে মিসেস শামীম অথবা শামীম সাহেবের পরী হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। আর নিজের ভালোবাসাকে ভালোবেসে বিসর্জন দেয়া বাবা অথবা মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের অনিঃশেষ ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে জীর্ণ হয়ে জন্ম নেয়া শান্ত ক্রমেই বড় হতে থাকে মৃত্যুর সাথে জয়ী হয়ে পৃথিবীতে তার আগমনী বার্তাকে জীবনের গানে রূপ দিয়ে।”
লাবিবের গল্প শেষ অনেকটা হঠাৎ করেই। সবার দৃষ্টি আমার দিকে। আমি বুঝতে পারি এইবার আমার বলার পালা। আরেকটু নেশাতুর হবার অভিপ্রায়ে আমি আবার গাঁজায় টান দেই। শান্ত শামীম তার স্ত্রী কিংবা সেই অজানা মানব মানবীকে ছাপিয়ে আমার কল্পনাপটে কোন নারীর আগমন ঘটে। আর আগি বলে চলি আমার অথবা তার গল্প,
“জায়গাটার নাম জানা এই গল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। কিংবা এই জায়গার অধিবাসীরা যেমন বিষণ্ণ হ্য়তো নামটিও তেমনই বিষণ্নই হবে। আর এই জায়গার একজন কর্মী অথবা যৌনকর্মী এই গল্পের প্রধান চরিত্র।তার পিছনে আগে হয়তো বা আছে কোন এক মর্মান্তিক গল্প। কিন্তু সেটাও আমাদের এই গল্পের অংশ না। এই গল্পের শুরু এবং শেষ একই জায়গার মাঝে যেখানে তার অভাব পীড়িত জীবনে হঠাৎ করে ঘটেছে স্বচ্ছলতার আগমন। তার স্থায়ী খদ্দের ভদ্রলোকের জন্যই তার এই সাময়িক স্বস্তি। এইজন্যই কি ভদ্রলোক শব্দটি তার মাথায় এলো? হয়তো বা। অথবা হয়তো বা না। দেহকামী পুরুষদের মাঝে বেছে নিয়ে কোন লোককে ভদ্রলোক বলার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে হয়তো সেটা বিবেচনা করার দরকারও তার পড়েনি। কারণ, কারণ তার পিতৃপরিচয়হীন বাচ্চা মেয়েটির মুখাবয়ব। সে স্বপ্ন দেখে অভাবের গ্রাসে এই মেয়েকে আসতে হবে না এই অন্ধকার জগতে। তাই তো সে নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে দিয়ে শুধুই স্বচ্ছলতার খোঁজ করে। নামহীন সেই বিষণ্ণ জায়গায় অজানা ভদ্রলোকের (!!) অনুগ্রহে প্রাপ্ত স্বচ্ছলতায় ডুবে গিয়ে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেয়া স্বপ্নাতুর কোন এক জননীর চোখের কোণে অশ্রুবিন্দু দেখা যায়।”
গল্প শেষ করে আমি তাকাই শহীদ ভাইয়ের দিকে। আমাদের সবার নেশাই ক্রমশ গাঢ় হয়ে যাচ্ছে। তাই হয়তো মনে হলো আমরা সবাই মোহচ্ছন্নতায় আবিষ্ট হয়ে ভাসছি হাওয়ায়। আর এর মাঝেই সোহেল শুরু করে তার গল্প।
” একটি অথবা দুটি পরিবারের কথা আসবে এই গল্পে। চারজনের একটি বা দুটি পরিবারের আপন দুই ভাই বোন শীলা আর সবুজ। তাদের মাঝে ছোটবেলা থেকেই গভীর মিল। মায়ের চোখ উপেক্ষা করে তাদের বাসার রান্নাঘর থেকে চুরি করা খাবার খাওয়ার সময় সবুজকে না ডেকে পারে না শীলা , সবুজও পাশের বাড়ির পেয়ারাটা চুরি করে সোজা চলে যায় আপুর কাছে। তারপরে ভাইয়ে বোনে ভাগাভাগি চলে। যেন একালের অপু আর দূর্গা। এর মাঝেই হঠাৎ করেই ঝড় আসে তাদের পরিবারে। আর সে ঝড় তাদের মা বাবাকে আলাদা করে দেয় আর আলাদা করে দেয় সবুজ শীলাকেও। কিন্তু তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক আলাদা হয় না। স্কুল থেকে ফেরার সময় বাড়ির পিছনে লুকিয়ে সবুজকে আদর করে যায় শীলা। এমনিভাবে বড় হতে হতে তাদের পথ আলাদা হয়ে যায়। তারপরেও নিজেদের জন্মদিনে নিয়ম করে বছরে দুদিন দেখা করে নিজেদের মাঝে।
যাপিত সময়কে পেছনে ফেলে বড় হবার পরের একদিনের ঘটনা। সবুজের জন্মদিনের সাতদিন আগে সেটা। সেদিনই চর্মচক্ষে শেষবারের মত শীলাকে দেখা। তারপরে, হয়তো কোন এক কবরস্থানে কোন এক যুবককে দেখা যায় মাঝে মাঝেই। অপ্রকৃতিস্থ ভাব দেখা যায় তার মাঝে। তার বিষণ্ণ নিস্তরঙ্গ দিনগুলোর মাঝে তার বোনের অদৃশ্য ভালোবাসা তাকে জড়িয়ে রাখে সবসময়।”
অস্পষ্ট চারদিকে কেমন যেন একটা বিভ্রম তৈরি হয়েছে। শহীদ ভাইয়ের ফলাফল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা চলছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না। তবে এক ধরণের চাপা উত্তেজনা নেশাসক্ত উত্তপ্ত মস্তিষ্কগুলোতে বয়ে চলছে সেটা বেশ ভালোমতই বুঝা যায়। শহীদ ভাইয়ের বিরক্তিকর নীরবতা আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে পারে না। পাশের নির্জন ডোবার উপর বেজে চলা ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক থামে এক সময়। সোহেল এক সময় বলে বসে, “শহীদ ভাই আমাদের গল্প লেখা না শিখিয়ে কী আবোল তাবোল প্যাচাল পারাচ্ছেন?”
“কেন, এতক্ষণ কী করলে তাহলে?”
” কেন প্রতিযোগিতা?”
” প্রতিযোগিতা তো হয় একাধিক গল্পের মাঝে। তোমরা সবাই মিলে তো একটি গল্পই লিখলে। একটি গল্প যেহেতু জমা পড়েছে এটাই প্রথম।”
” কি যা তা বলছেন ?” শহীদ ভাইয়ের হেঁয়ালিতে বিরক্ত হয় লাবিব।
” কেন, তোমরা যা লিখলে সবই জীবনের টুকরো গল্প। আর এই টুকরো গল্প জোড়া দিয়েই হয় একটা গল্প। এই যে দেখো এই টুকরো গুলো আমি জোড়া দিয়ে দেই। ধরো সোহেলের শীলা আর লাবিবের মিসেস শামীম একই ব্যাক্তি।একইভাবে সিয়ামের মানব আর সোহেলের সবুজ হয়তো একই ব্যাক্তি। আবার রাশেদের সেই ভদ্রলোক যার ভদ্রত্ব নিয়ে সন্দেহ হতে পারে তিনি হলেন আসলে শামীম সাহেব।”
” থামেন কী যা তা বলছেন?” লাবিব চেচিয়ে উঠে। ” এমন রোমান্টিক দৃঢ় শামীম সাহেব লম্পট হতে যাবেন কেন?”
” আমি আগেই “হয়তো” শব্দটি বলেছি। এই জায়গায় পাঠকের জাজমেন্টের উপর ছেড়ে দাও। হতে পারে শীলাকে হারিয়েছেন কিন্তু তার ভালোবাসা ধরে রেখেছেন তার মনে তাই শীলার জায়গায় কাউকে স্থান দিয়ে স্ত্রী করতে পারেননি। অথচ তার শরীর মনের সাথে বিদ্রোহ করে আর এই দুয়ের মিথস্ক্রিয়া তাকে নিয়ে গেছে পতিতালয়ে। অথবা পতিতালয়ে তিনি যান শুধুই অন্ধকারে ডুবে থাকা অশায় নারীদের ভাগ্য বদলাতে।”
আমরা সবাই চুপ করে থাকি কিছুক্ষণ। শহীদ ভাই আবার বলেন, ” আমি যেভাবে জোড়া দিলাম এটাই শেষ কথা নয়। গল্প জোড়া দেয়াটা খেলার মত। অন্যভাবেও হয়তো জোড়া দেয়া যাবে। আবার চাইলে কোন জোড়া না দিয়ে খণ্ড খণ্ড বিচ্ছিন্ন গল্প হিসাবেও রেখে দেয়া যায়। আজকে যেমন তোমরা চারজন চারজোড়া চোখে ভালো বাসা দেখলে এমনি চার অথবা অনেক জোড়া চোখে যখন পৃথিবীকে দেখবে গল্প বের হবে এমনি এমনি।”
শহীদ ভাই থামলেন। আমাদের সবার মাঝে এক ধরণের শব্দহীন আলোড়ন বয়ে যাচ্ছে। নিজের অস্তিত্বে অনুভব করছি আমার অনুভূতি ক্রমশ হালকা হয়ে আসছে। ডোবার ওপারের ঝোপের মাঝে থেকে আমাদের হাতে জন্ম নেয়া চরিত্রগুলো যেন ক্রমাগত বের হয়ে আসছে আবার নিজেরা জোড়া লাগছে অথবা বিশ্লিষ্ট হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে মায়াময় কুয়াশার মাঝে। শেষরাতের চাঁদ বড় হয়ে আর আলো হারিয়ে অপলকে চেয়ে আছে যেন বিনিদ্র রাতযাপনকারী পাঁচজন মানবের দিকে।

No comments:

Post a Comment